অতিথি প্রতিবেদক:: সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভুয়া ডাক্তার ও কবিরাজদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সময়ের পরিক্রমায় ব্যাপক হারে এইসব ভুয়া ডাক্তারদের সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা সংশ্লিষ্টশীলরা এদের বিরুদ্ধে আইনগত তেমন কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে মাত্রাতিরিক্ত হারে দিন দিন তাদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে এইসব কবিরাজ ও ভুয়া ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়ে চরম অনিশ্চয়তার ভেতর দিনযাপন করছেন উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার রোগী। সর্বরোগ বিশেষজ্ঞ, মা ও শিশু রোগে অভিজ্ঞ, ডায়াবেটিস এবং দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও কৌশলে রোগীদের আকৃষ্ট করতে প্রেসক্রিপশন কিংবা সাইনবোর্ডে বিভিন্ন রকম ডিগ্রী ব্যবহার করে এইসব হাতুড়ে ডাক্তাররা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই অভিনব ব্যবসা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের রুহুল আমীন চৌধুরী আব্দুল খালিক সুপার মার্কেটে আমীন ফার্মেসী এন্ড ডেন্টাল কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠান দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। উক্ত রুহুল আমীন চৌধুরীর অপচিকিৎসায় জায়েদা বেগম নামের এক গৃহবধু ৫টি দাত হারিয়ে বর্তমানে কঠিন যন্ত্রনায় ভোগছেন। এব্যাপারে ভুক্তভোগী জায়েদা বেগম এর স্বামী আব্দুল খালিক সিলেটের সিভিল সার্জন, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপরও রুহুল আমীন এর ব্যবসা বন্ধ হয়নি। পুলিশসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে তার কার্যক্রম। শুধু জায়েদা বেগম নয়, রুহুল আমীন চৌধুরীর অপচিকিৎসায় ইতিমধ্যে শত শত লোক হয়রানীর শিকার হয়েছেন বলে একাধিক ভুক্তভোগি জানিয়েছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে কোন রকম সার্টিফিকেট ছাড়াই দীর্ঘদিন যাবত ফার্মেসী দিয়ে দন্ত চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও তার ব্যাপারে প্রশাসনিক কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে তার মত ভূয়া সার্টিফিকেট বিহীন
চিকিৎসকের কবলে পরে শুধু আব্দুল খালিক নয় বহুলোক প্রতারিত ও আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ফেব্রæয়ারী) বিশ্বনাথে এক তরুণীকে (১৯) প্রায় দেড় বছর ধরে চিকিৎসার নামে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে এক কবিরাজ এবং তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। । গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. কমরুদ্দিন (৫০) ও তাঁর স্ত্রী সুমি বেগম (৪০)। তাঁরা বিশ্বনাথের খাজাঞ্চী ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা বিশ্বনাথের পুরান বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।
পুলিশ ও ওই তরুণীর মায়ের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, বিশ্বনাথের পুরান বাজারে ‘সিফা তদবিরালয়’ নামে ঝাড়-ফুঁকের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মো. কমরুদ্দিন। প্রায় দেড় বছর আগে ওই তরুণীকে তাঁর মা বিভিন্ন সমস্যার জন্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। সে সময় কমরুদ্দিন তরুণীকে চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছে তিন মাস রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। ওই সময় তরুণীর মা তাতে রাজি হয়ে চিকিৎসা খরচের ১০ হাজার টাকাও দেন। তিন মাস পর মেয়েকে নিতে আসলে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন কমরুদ্দিন। এ সময় তরুণীর মাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেন। এতে ভয়ে কারও কাছে অভিযোগ দিতে পারেননি ওই তরুণীর মা। পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বনাথ থানা-পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। পুলিশ কমরুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীকে আটকের পাশাপাশি তালাবদ্ধ ঘর থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে তরুণীকে চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়।
ওই তরুণীর মা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, নানা রকমের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত মেয়েকে সুস্থ করতে চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড় বছর আগে কবিরাজ কমরুদ্দিনের শরণাপন্ন হন তিনি। তাঁকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ রেখে বাইরে বের হতে দিতেন না কমরুদ্দিন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে বিয়ের বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রদর্শন করে আসছিলেন কমরুদ্দিন।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে একজন সিভিল সার্জন ও একাধিক এমবিবিএস ডাক্তার জানান, এমবিবিএস কোর্স শেষ করার পাশাপাশি বিএমডিসি’র অনুমোদন ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার আইনগত বৈধ নয়। অন্যান্য বিভাগ থেকে কেউ যদি বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে তবে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পল্লী চিকিৎসক পদবি ব্যবহার করতে পারেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ কামরুজ্জামান এব্যাপারে আলাপকালে জানান, এসব ভুয়া কবিরাজ ও ডাক্তারদের বিষয়ে প্রশাসন অবগত রয়েছে। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এবিষয়ে আলোচনা করা হবে এবং জনস্বার্থে এসব ভুয়া কবিরাজ ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্বনাথের সচেতন মহলের দাবী, দ্রুত সময়ের মধ্যে এইসব ভুয়া কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তার খেসারত দিতে হবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাধারণ রোগীদেরকে।